ভদ্রতাই মানুষের আসল পরিচয়

ভদ্র ব্যবহার দিয়ে অনেক অসাধ্য জিনিস ও পাওয়া যায়। কিন্তু সেই একই জিনিস অভদ্র আচরণ দিয়ে পেতে গেলে কত কষ্ট পেতে হয় ,আবার সময়ের অপব্যবহার ও করতে হয়। এই ভদ্রতা প্রতিটি মানুষের মধ্যে থাকলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। 

কত ছোটোখাটো কারণে কত ঝগড়া হয়ে থাকে।  দেখেছি বাস এর মধ্যে দুই যাত্রীর একে অপরের সাথে কি নিষ্ঠূর ব্যবহার ! কারণ টা কিন্তু খুব সামান্যই ছিল। একটা ছোট্ট বাচ্ছা তার দাদুর কোলে বসে পা গুলো ওই আরেকটি লোকের দিকে রেখেছিলো। ব্যাস এই সামান্য কারণে ওই লোকটি উত্তেজিত হয়ে কত কথাই না শুনিয়ে দিয়েছিলো ওই দাদুটিকে। 

আবার আরেকদিন বাস এর মধ্যে এক দাদু বসেছিলেন। বাস টি  চলছে।  একটা অল্পবয়সী মেয়ে দাদুর কাছে দাঁড়িয়েছিল। কারণ বসার কোনো জায়গা ছিল না। আর মেয়েটি ৫-১০ মিনিটের মধ্যেই নেমে যাবে বলে ভেতরের দিকে যায় নি। মেয়েটি হঠাৎ করে হালকা কাশি কাশতে থাকে ,তাও অন্য দিকে মুখ ঘুরে। ব্যাস ,টাকলু ওই দাদু টির সে কি রাগ !তুমুল চিৎকার শুরু করে দেয়। ভদ্রতা (manners ) নিয়ে কথা শোনাতে থাকে ওই মেয়েটিকে। 

ভদ্রতা !অন্যকে সম্মান দেওয়া ,নম্র সুরে কথা বলা -ব্যাস এইগুলোই তো ভদ্রতার পরিচয়। যাদের মধ্যে অহংকারের আগুন জ্বলে তারা কখনোই ভদ্র হতে পারে না। অন্যকে সম্মান দিলে কখনোই নিজের সম্মান হারিয়ে যায় না ,বরং বেড়ে যায়। এমন কিছু মানুষ আছে যারা নিজেকে বিশাল ভাবে ,আর বাকি সক্কল কে খুব ই ছোট হবে। পেশা দিয়ে ,ডিগ্রী দিয়ে মানুষের পরিচয় হয় না। 

আচ্ছা বলুন তো  একটা দোকানদার কে  কি "স্যার " দিয়ে সম্বোধন করা যায় না ?কেন যায় না ? আপনি প্রফেসর বা ডাক্তার বলে ?আর দোকানদার সামান্য ১০,০০০-১২০০০ টাকা কামাই বলে ? নাকি দোকানদার এর স্টেটাস নেই বলে ?আমরা কি আমাদের নৈতিকতা কে বিসর্জন দিয়েছি ?স্যার কথাটার মানে কিন্তু "ভদ্রভাবে কাওকে সম্বোধন করা "। অনেক দোকানে দেখেছি কিছু প্রফেসর হোটেলের কর্মচারী কে বলে -" এই তাড়াতাড়ি খেতে দে। কি করছিস কি ? তাড়াতাড়ি করতে বলছি না ?" ওই কর্মচারীর বয়স কিন্তু যথেষ্টই বেশি ওই প্রফেসর এর চেয়ে। কিন্তু কি তার হম্ভিতম্বী ?

আচ্ছা আমরা কেন বুঝি না আমাদের ওদের কে খুব দরকার? প্রতিটা মানুষের ই অবদান আছে এই পৃথিবীতে। কেও চাষ করছে বলেই কিন্তু আমাদের অন্ন জোটে। কেও হোটেল খুলে রান্না করছে বলেই আমরা ব্যস্ততার মাঝে একটু পেট এর চিৎকার মেটাতে পারি। কেও ঝাড়ু দেয় বলেই তো রাস্তা গুলো পরিষ্কার থাকে। সবসময় টাকা দিয়ে সব কিছু হয় না। আপনি যাদের কে স্যার বলে ডাকতে অস্বস্তি বোধ করেন তারা সামান্য টাকাতেই খুশি হয়ে যায় ,বরং তারা ভালো ব্যবহার পেতে চায়।  

আসুন,আপনি আমি সব্বাই মিলে একটু বিনীতভাবে কথা বলে দেখি তো ,ওই একদম সাধারণ মানুষগুলো খুশি হয় কিনা ?একটিবার চা ওয়ালা কে বা হোটেলের ওই লোকটিকে স্যার বলে ডেকে দেখুন তো। বিশ্বাস করুন ,ওই খেটে খাওয়া লোকগুলোর মনে কাজ করার এক নতুন আশা জন্ম নেবে। ওরা প্রচুর খুশি হবে ,বিশ্বাস যদি না হয় ,একটু প্রয়োগ করে দেখুন না। আসুন, আমরা সব্বাই অহংকার কে বিসর্জন দিই। 

মনে রাখবেন ওদের সাথে বাজে ব্যবহার করা মানে কিন্তু ওই কাজ টিকে অসম্মান করা। আর জানেন তো আপনি যদি কোনো কাজ কে অসম্মান করেন ,একদিন এমন না হয় ওই কাজ টি আপনাকে নিজেকেই করতে হচ্ছে দিনের পর দিন আপানার বাড়ি তে। তাই সব কাজকেই সম্মান দিতে শিখুন। মানুষ মারা যাওয়ার পর ,কেও ওই মানুষটির টাকা ,পয়সা ,সম্পত্তি নিয়ে কথা বলবে না ,বা ঐসব মনেও রাখবে না, মনে রাখবে ওই মানুষটির ব্যবহার টি। তাইতো আপনার ব্যবহার ই কিন্তু আপনার আসল পরিচয়।আসুন আমরা সক্কলে মিলে ওই নিচুস্তরের মানুষগুলোর সাথে ভালো ব্যবহার দিয়ে ওদের মুখে হাসি ফোটায়। 





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মাতৃভাষা

কালবৈশাখীর আগমনে

মাতৃত্ববোধ