নারীদের চাকুরীজীবনই কি সংসার ভাঙ্গনের কারণ ?

শোনা যায় -পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের নাকি প্রচুর উন্নতি হয়েছে।বাকি রাজ্য গুলোতে সেইভাবে নাকি উন্নতি হয় নি। আপনিও কি এক মত্ ?কথাগুলো খুব একটা অস্বীকার করা যায় না কিন্তু। ঘরে ঘরে মেয়েরা নিজের উপার্জনে জীবন কাটাতে চাইছে। এমন কি গ্রামগুলোতেও প্রচুর মেয়ে কর্মরত। মেয়েরা স্বাধীনচেতা হয়েছে। 

সবার আগে পুরুষমানুষদের কাছে থেকে আসা কিছু অভিযোগ বলা যাক :
কেও কেও বলে থাকেন এতে নাকি সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে ,সংসারে বিবাহবিচ্ছেদ বেড়েছে। মানিয়ে চলার ক্ষমতা ও নাকি মেয়েদের অনেক কমে গেছে। এমনকি পুরুষ মানুষদের বেকারত্ব বেড়েছে।একজন চাকুরিরতা মহিলা কখনোই বেকার পুরুষমানুষ কে বিবাহ করতে চায় না ,কিন্তু চাকুরীরত পুরুষরা বেকার মহিলাদের তো সহজেই বিবাহ করে থাকে। একটা পরিবারে যদি স্বামী স্ত্রী দুজনেই যদি চাকুরী করে,স্ত্রীর টাকা টা  নাকি পরিবারের কোনো কাজে আসে না -মহিলারা নাকি পরিবারের দায়িত্বের বদলে নিজেকে গোছাতেই বেশি ব্যস্ত হয়ে ওঠে। তাই স্বাভাবিকভাবেই পুরুষ মানুষ টিকেই পরিবারের আর্থিক চাহিদা মেটাতে হয়। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী অতীতে যেমনভাবে মহিলারা দিন কাটাতো সেটাই নাকি ঠিক ছিল। সমাজের ভারসাম্য ঠিকঠাক ছিল। এখন মহিলারা চাকুরী করে বলে তাদের নাকি আর নাগাল পাওয়া যায় না ,পরিবারে অশান্তি নাকি দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিবাহ বিচ্ছেদ এই কারণে আরো বেড়ে গেছে। 

আপনারা ও কি এই অভিযোগগুলোকে সায় দেন ?দেখুন -ব্যতিক্রম সব কিছুর মধ্যেই থাকে ,আর থাকবেও। এই যে ঘরে ঘরে মহিলারা আজ চাকুরীরত ,তার জন্য কি পুরুষরাই দায়ী নয় ?যদি মহিলারা সংসারের মধ্যে আনন্দে থাকতো ,তাহলে তারা এতো সংগ্রাম করতে যাবেই বা কেন ?অতীতে এমন একটা সময় ছিল -যখন মহিলারা এতো টুকু সম্মান পেতো না,শুধু দিনের পর দিন অত্যাচার সয়ে যেত (এই ছবি এখনো অনেক গ্রামে বিরাজমান )। ১৮ বছর বয়সের আগেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো। বিয়ের পর মেয়েটির বাবা মা ও চাইতো না মেয়ে বাপের বাড়িতে থাকুক ,মেয়েটিকে শেখানো হতো তার বাবার বাড়িটি তার বাড়ি নয়। অন্যদিকে শশুড়বাড়ির লোক ও অত্যাচার করতো ,মেয়েটির কোনো স্বাধীনতা থাকতো না। বাড়িতে কন্যাসন্তান জন্ম নিলে মেরে ফেলা হতো কিংবা ছোটবেলা থেকেই তাকে আলাদা চোখে দেখা হতো। এখনো অনেক গ্রামে -এক ভাই আর এক বোন থাকলে ,ভাই টিকে খুব বেশি খাবার দেওয়া হয় ,কিন্তু বোনটিকে দেওয়া হয় না ,কারণ তাকে তো কয়েক বছর পরেই বিয়ে দিয়ে পরের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ভাইটিকে খুব যত্ন সহকারে পড়াশুনো শেখানো হয় ,কিন্তু মেয়েটিকে ১১-১২ ক্লাস অবধি পড়িয়ে ছাড়িয়ে দেওয়া হয় ,কিংবা কোনোভাবে পাসকোর্স এ ভর্তি করানো হয় ,আরেকদিকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায় বাবা মা। তাই মেয়ের বাবা মা মেয়ের জন্ম থেকেই মেয়ে টিকে পর ভাবে ,অন্যদিকে ছেলের বাবা মা ছেলেটিকে নিজের অধিকার ভাবে। 

সত্যি বিধাতার কি নিষ্ঠূর পরিহাস ! আর নারী তো প্রকৃতি এরই এক রূপ। প্রকৃতি স্বাভাবিকভাবে তা সহ্য করতে পারে নি। তাই একটু একটু করে প্রকৃতি নারীদের জাগিয়ে তুলছে। আজ নারীরা জেগে উঠেছে ,আর তারা স্বামীর হাতের বা শশুড়বাড়ির হাতের পুতুল হয়ে থাকতে চায় না। আজ তারা সত্যি বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে। একটা ছেলে যদি তার পিতা মাতার দায়িত্ব নিতে পারে ,তাহলে একটা মেয়ে কেন পারে না ?আর নিজের পিতা মাতার দায়িত্ব নিতে গেলে ,আর্থিকভাবে স্বাধীন হাওয়টাতো সবার আগে দরকার। 

একদিন গ্রামগুলোতেও শহরের ছবি ই ফুটে উঠবে। তবে হ্যাঁ ,সব কিছুরই একটা মাত্রার মধ্যে থাকাই ভালো। যদি নারীরাও তাদের স্বাধীনতার অপব্যবহার করে ,তাহলে তাদের কেও এই সুদিন একদিন হারাতে হবে। এটাই তো প্রকৃতির নিয়ম। তাই চাকুরিরতা নারীদের দায়িত্ত্ব অনেক নিতে হবে। একটা সন্তানকে মানুষ করার দায়িত্ব টা কিন্তু সেই নারীটিকেই নিতে হয়। আবার সংসার যাতে না ভাঙ্গে ,সেটাও দেখা দরকার। সংসার ভালো রাখতে গেলে একজন কে নুইতেই হবে। নিজের আপনজনের কাছে ,ঘরের ভেতরে ,প্রয়োজনে মাথা নোয়াতে ক্ষতি কি ,শুধু দেখা দরকার ,ঘরের বাইরে এই বিশাল পৃথিবীতে কখনো যেন মাথা নুইতে না হয় ,আর এই ব্যাপার টাতে পরিবারের লোক ও যেন সাহায্য করে। এটা কিন্তু চিরন্তন সত্য সংসার সুখী হয় রমণীর গুনে কিন্তু তার মানে এই নয় যে অন্যায় সহ্য করবেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে সংসার এর মধ্যে অন্যায় যেন না হয় সেইদিকে নজর দিয়ে সংসার কে গুছিয়ে রাখতে একমাত্র নারীরাই পারবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মাতৃভাষা

কালবৈশাখীর আগমনে

মাতৃত্ববোধ