শরতের দুর্গোৎসব


quote on durga puja এর ছবির ফলাফল

ঠিক শরতের আগমনে একটা অন্যরকম অনুভূতি বাঙালিদের মনে জাগে ,এই অনুভূতি সহজে বোঝানো যায় না। এ যেন এক মিলনোৎসব ,পুরো শহরবাসী একত্রিত হওয়ার এক অনুষ্ঠান। বিদেশে ,স্বদেশে যে যেখানেই থাকুক না ,সব বাঙালিই চেষ্টা করে পুজোর দিনগুলো বাড়িতে ,নিজের শহরে কাটানোর। 

বাঙালিরাই বোধ হয় বেশি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে বিভিন্ন দেশে চাকরিসূত্রে। কিন্তু শরতের শিউলিভরা সকালগুলো কাশফুলের আগমনে দুর্গাপুজোর বার্তা নিয়ে এসে আমাদের মনে আলাদা এক রোমাঞ্চকর আলোড়ন তুলে যায়। 

যতই বলি না কেন দুর্গোৎসব কেও মানুষ ব্যবসাতে  পরিণত করেছে কিন্তু এটা মানতেই হয় যে আত্মীয় সমাগমের আনন্দে দুর্গোৎসবের ওই চারটি দিনের আলাদা এক মাধুর্য আছে। গ্রামাঞ্চলে আরো বেশি আনন্দ লাভ করা যায়। নিজের কাকিদের সাথেই কথা হয় না এই ব্যস্ত জীবনে ,আর পাড়ার কাকিদের সাথে কথা হওয়া তো দূরের কথা! তাই পাড়ার কাকিরাও উদগ্রীব হয়ে থাকে অমুখ বাড়ির ছেলে, মেয়ে ,বউমা রা কয়জন আসছে ,কবে আসছে  তার অপেক্ষায়। 

এই কয়েকটা দিন সব্বাই প্রচুর কেনাকাটা করতে থাকে। কেনাকাটার মধ্যেও এক অনাবিল আনন্দ পাওয়া যায়। অন্যকে কিছু দিতে পারলে পুজোর দিনগুলো আরো চমকপ্রদ হয়ে ওঠে। আর যারা দিতে পারে না অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য ,কিন্তু নিজেদের জন্য কিনতে পারে -তাদের একটাই কথা বলবো -"আপনারা তাঁদের কিনে দিন আর তাঁরা আপনাকে কিনে দিক"। এইভাবে বিনিময় করুন। আর যাদের শুধুই প্রাচুর্য ,তাঁদের বলবো -"আপনাদের পুরানো জামাকাপড় যেগুলো আপনারা পরেন না অথচ নতুনের মতোই আছে ,দিয়ে দিন তাঁদের যারা কিনতেই পারছেন না"।দেখবেন দেবী দূর্গা আপনাদের ওই শূন্যস্থান আবার ভরিয়ে দেবে।  

এবার আবার সেই প্রাক-দুর্গোৎসবের আনন্দ পরিবেশে আসা যাক। আশ্বিন মাস এর শুরু থেকেই কেনাকাটা আরম্ভ হয়ে যায়। প্রচুর পরিমানে ড্রেস ,ম্যাচিং এ গয়না-কাটি ,আরো কত কিছু ,বাড়ির সব বাচ্ছাদের জন্য ড্রেস -সে এক বিশাল ব্যাপার। কেনাকাটার চল টা বেশি যেন কোলকাতাতে। শপিং মল গুলোও পুজোর আনন্দে সেজে ওঠে। রাস্তাগুলো ও বাদ যায় না কিন্তু। আর বয়স্করা যেন বেশি আনন্দ পায় নাতি-নাতনি কে দেখতে পেয়ে। 

বাঙালির কাছে দুর্গাপুজো মানে অষ্টমীতে উপোস করে অঞ্জলি দেওয়া ,ওই চারটে দিনের প্রতি সন্ধ্যায় আরতি দেখা ,নানান রকম কালচারাল অনুষ্ঠানে ছোট-বড় সবার অংশগ্রহন ,আত্মীয় সমাগমের অনুষ্ঠান ,হৈহুল্লোড়ে এর চারটে দিন , ছোটবেলার বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারার অনুষ্ঠান ,সন্ধ্যেবেলা সব বন্ধু মিলে একসাথে ফুচকা খাওয়ার অনুষ্ঠান। এ যেন এক অবসাদ কাটানোর অনুষ্ঠান, একঘেঁয়েমি কে দূর করার অনুষ্ঠান। এ যেন দেবী দুর্গার কাছে আশীর্বাদ চাওয়ার অনুষ্ঠান -যেন আমরা সব্বাই সুস্থ শরীরে সুস্থ মনে আবার পরের বছর মা কে দেখতে পাই,সেই প্রার্থনার অনুষ্ঠান। 

এই যে পুজো আসছে এতে যেমন এক অদ্ভুত আনন্দ ঠিক তেমনি পুজো যেদিন শেষ হয়ে যায় এক অদ্ভুত দুঃখ হয় ,মনে হয় যেন বাড়ির আপন কেও আমাদের ছেড়ে চলে গেলো। মনে হয় আবার জীবনটা একঘেঁয়েমীর সমুদ্রে ভেসে যাচ্ছে। মনে হয় আবার আমরা অসহায় হয়ে গেলাম।আবার সেই কাজ,কাজ আর কাজ। নেই কারো সাথে কোনো কথা ,নেই কারো বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রয়াস। যেন শুধু নিজে আর নিজের পরিবার কে নিয়ে ব্যস্ত থাকা। 

সক্কলে ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন  আর পুজোতে জমিয়ে আনন্দ করুন আর সব্বাইকে আনন্দ দিন। 
পুজোর ছুটিতে আপনাদের কাছে নিয়ে আসবো নতুন চমক। সাথে থাকবেন ,ভালো থাকবেন আর সব্বাইকে ভালো রাখবেন। 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মাতৃভাষা

কালবৈশাখীর আগমনে

মাতৃত্ববোধ