মা -১


picture of working mother এর ছবির ফলাফল  picture of working mother এর ছবির ফলাফল


এই যে সেদিন জন্ম নিলাম আমিই সেই মেয়েটা,
জানুয়ারী মাসের পনেরো ছিল তারিখটা।
সাল টা ছিল 2013,সবে যখন সাতদিন গড়ালো,
আমার না বোঝা আওয়াজে ঘরটা ভরে উঠলো।
তিনটে মাস মায়ের সাথে কাটলো আধো আধো বুলিতে,
সমস্ত ব্যথা সেরে যেত এক নিমেষে মায়ের ছোঁয়াতে।
যদি জানতেম তিনটে মাসের পর সব যাবে বদলে
যদি জানতেম তিনটে মাস পর আমার পৃথিবীটা যাবে ঘুরে
তাহলে প্রার্থনা করতুম তিনটে মাস যেন শেষ না হয়-
মা আর আমার মধ্যে যেন কোনো দূরত্ব তৈরী না হয়।

এই যে সেদিন জন্ম নিলাম আমিই সেই মেয়েটা।
যখন সবে তিন মাস,চারিদিকে ধনিত হতো মা ডাকটা,
শুনসান ফ্ল্যাট টা গম গম করতো মা ,মা ডাকে,
মায়ের সাথে হাসি,খেলা,জড়িয়ে থাকতাম শুধু মাকে।
হঠাৎ একদিন এক নতুন অতিথি এলো ঘরে,
মা আমায় বললো মা-আ-আ-সি বলে ডাকিস তারে।
তখনো শিখি নি কথা,শিখি নি বসতে শিখি নি দাড়াতে-
এমন একদিন দেখি মা কে ব্যাগ নিয়ে দৌড়াতে,
বড্ডো তাড়াহুড়োতে ছিল মা,বললো কেঁদো না সোনা,
আরো বলেছিল অনেক কিছুই,যার কিছুই ঢুকল না-
এই কচি মনে,তারপর শুধু এদিক ওদিক তাকাতে থাকে
আমার নিষ্পাপ চোখ দুটো,শুধু ভাবতে থাকে আনমনে-
আমায় নতুন মাসির কাছে রেখে মা তুমি কোথায় গেলে চলে ?
মা গো দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমে আসে,
আমায় একলা ফেলে,কোথায় গেলে,
আসবে না কি আর ,বসবে না মোর  পাশে?

এই যে সেদিন জন্ম নিলাম আমিই সেই মেয়েটা।
শুধু নতুন নতুন মাসি কে নিয়েই কাটলো ছোট্টবেলাটা।
বিষন্ন আমার মন,এমন সময় আওয়াজ পেলুম -মা আ
হাসিতে তখন টগবগ,ঘরে এসেই শুধু চোখে চোখে কথা
তুমি বলেই চললে-কাঁদোনি তো সোনা,খেয়েছো ?
আমি তখন হাসছি আর বলছি মা এইছো?
তোমার চোখে ও কত বেদনা কত কষ্টের ছাপ,কত কান্না।
এতই যদি কাঁদো,গিয়েছিলে কেন আমায় ফেলে একলা ?
তারপর থেকে- রোজই তুমি যাও চলে  ঠিক একই সময়ে
আমায় একলা করে সেই বন্দি ফ্ল্যাটে,অজানা মাসির কাছে রেখে।

এই যে সেদিন জন্ম নিলাম ,আমি ই সেই মেয়েটা।
কখন যেন অভ্যেস হয়ে গেলো দুপুরবেলা একলা থাকাটা।
বয়স যখন সাত মাস ,শিখলাম মা আ বলতে -মা আ আ
আনন্দে ,বিপদে,কাজে ,অকাজে শুধুই ডাকতাম মা আ।
কখনো মিলতো সাড়া ,কখনো বুঝতাম তুমি বাড়ি নেই ,
তখন জ্বালিয়ে মারতাম মাসিটাকে ,করতাম হৈ  চৈ।
বয়স যখন আট মাস ,সন্ধ্যে নামলেই তুমি শেখাতে কত কিছু।
শিখলাম বসতে,হামা দিতে,শিখলাম আরো অনেক কিছু।
বয়স যখন এগারো মাস ,আলতো আলতো পায়ে চলছি আমি
তখন বুঝলাম বেলা হলেই তুমি অফিস দাও পাড়ি।
সন্ধ্যে ঘনালেই আমায় নিয়ে মাঠে নামো  তুমি
মাকে না পাওয়ার কষ্ট যেন বুঝতে না পারি আমি।
বয়স যখন তিন বছর ,কত অজানা মাসীই এলো গেল ,
আমার চেয়ে  বেশি আমার মা ই কষ্ট পেল।
যে মাসিকেই মা ভালোবাসতে শেখায়,কয়েক মাস পরে সে পালায়
কেঁদো না সোনা বলে মা এর চোখে জল আমায় শুধু ভাবায়।


এই যে সেদিন জন্ম নিলাম আমিই সেই মেয়েটা।
আমায় একলা রাখায় এতো কষ্ট তোমার ,তবুও ছাড়ো না কেন চাকরিটা ?
আজ আমি স্কুলে যাই ঠিকই তবু মনে হয় বারে বারে
সবার মা এর মতো আমার মা কেন আসে না স্কুল দরবারে
আমায় নিতে?মা তুমি অনেক বোঝাও মোরে ,তবু মনে হয়
চাকরি নাই বা করলে -তাতে তোমার আমার কি এসে যায়?
সবে তো LKG তে পড়ি মা ,তুমি চিন্তা আর কারো না
যা আমি বুঝবো না এই বয়সে  আর আমারে বুঝিও না
তোমার চোখ দেখেই বুঝেছি তুমি মোরে কম ভালো বাসো না।
একদিন আমি ঠিক বুঝতে পারবো চাকরিটা কেন তুমি ছাড়লে না?












মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মাতৃভাষা

কালবৈশাখীর আগমনে

মাতৃত্ববোধ