দুই ফুল


একটি গাছের ওপরের কান্ডে গজানো ফুলের সাথে সবচে নিচের কাণ্ডে গজানো ফুলের কথোপকথন :

উপরতলার ফুল : আমি সবচে সুন্দর ফুল,কেন জানো ?আমি গাছের সবচে ওপরের ডালে আছি।আমি ওপর থেকে পুরো কলকাতা শহর দেখি।আমার চারিপাশে বিশুদ্ধ তাজা বাতাস।আসলে আমার বাবা মা ওই বাজে মাটি তে জন্ম নিলে কি হবে,আমি ভাগ্যবান তাইতো আজ ওই অশুদ্ধ মাটি থেকে উঠে আসতে পেরেছি।

নিচের তলার ফুল :
কিন্তু আমি তো মা বাবার খুব কাছে আছি।এই যে শিকড় যেখান থেকে তোর আমার দুজনের ই জন্ম,তার কত কাছে আমি। জানিস তো বোন,আমি বাবা মার ছায়ার মধ্যে থাকি,এর চেয়ে বড় সুখ কি আর আছে ?

উপরতলার ফুল :
কিন্তু বোন তুই শুধু একতলা বাড়ি আর মাঠ ঘাট দেখতে পাস,আমি এখান থেকে সব দেখতে পাই,বিশাল বড় প্রাসাদ,সূর্যোদয়,সূর্যাস্ত। আমি তো রাজা রে।

নিচের তলার ফুল :
তা অবশ্য পাস । কিন্তু দেখিস বোন,সাবধানে থাকিস। বাবা মা আর আমরা তোর থেকে অনেক দূরে আছি। নিজে নিজের যত্ন নিস । তোর পাশ দিয়ে যে পাখিগুলো উড়ে যায় তাদের একটু দেখভাল করিস ।বলা তো যায় না কার কাকে কখন দরকার পড়ে  ।

উপরতলার ফুল : তুই চিন্তা করিস না । আমি রাজাই থাকবো । তোর সাথে ও কথা বলে আনন্দ পাই না,তুই সেই সেকেলে ই রয়ে গেলি ।

দীর্ঘদিন দুই বোনের কোনো বাক্যালাপ নেই ।তারপর একদিন :

উপরতলার ফুল : দিদি আমাকে বাঁচা । আমি আর এখানে থাকতে পারছি না। এবছর সূর্যের তেজে আমি পুড়ে যাচ্ছি।আমার একটা পাপড়ি ইতিমধ্যেই মাটিতে পড়ে গেছে । দিদি, খুব কষ্ট হচ্ছে রে ।আর বেশিদিন থাকবো না ।

নিচের তলার ফুল :
দেখ,বোন তোকে আমি সাবধান করেছিলাম। পরোক্ষভাবে তোকে বুঝিয়েছিলাম যে মাটিতে আমার বাবা মা এর জন্ম, সেই মাটি কে তাচ্ছিল্য করিস না । কিন্তু তুই শুনিস নি,তুই দীর্ঘদিন আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখিস নি ।আজ তুই বিপদে পড়েছিস ,
আর সেই তোকে আমাদের বাজে মাটিতেই শেষে মিশতে হচ্ছে । কিন্তু তুই বুঝতে বড্ডো দেরি করে ফেলেছিস । আজ আমার কিছু করার নেই ।

উপরতলার ফুল :

ঠিক বলেছিস দিদি, এটা আমার সবচে বড়ো ভুল । আজ আমি বুঝতে পেরেছি, আমাদের শিকড় কে কখনো তাচ্ছিল্য করা উচিত না, মাটি যতই বাজে হোক না কেন ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মাতৃভাষা

কালবৈশাখীর আগমনে

মাতৃত্ববোধ