করোনা

 

উফ আর পারা যাচ্ছে না। এতো কাজের মধ্যে এই ভিডিও, ওই ভিডিও, এই খবর ,ওই খবর। সকাল বিকাল মোবাইল এ শুধু  করোনার খবরই আসতে থাকে। কেও বলে -সবসময় সাবান দিয়ে হাত ধুতে,আবার কেও বলে -আমাদের হাতের মধ্যে কিছু ভালো ব্যক্টেরিয়া থাকে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। বার বার হাত ধুলে বা স্যনিটাইজার লাগালে, ওই ব্যক্টেরিয়া গুলো মরে যায়। এর ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। মহা মুশকিল তো! কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল? কোনটা শোনা উচিৎ? দুদিকেই সমস্যা। এই অবধি তাও ঠিক ছিল। কিন্তু আজকের মেসেজ টা পড়ার পর আর না লিখে থাকা গেল না।

ভদ্র মহিলার বাড়ীতে কারো করোনা নেই। ভদ্রমহিলা বাড়ীর বাইরে যান না, বাইরের খাবারও খান না।তবু ভদ্রমহিলার করোনা এল কি করে? এই নিয়ে খতিয়ে দেখা হয়েছে। মেসেজ এ বলা হয়েছে যে - ভদ্রমহিলার করোনা ফ্রিজে রাখা খাবার বা সব্জি থেকে এসেছে। আর সেইজন্য কিছু টিপস ও দেওয়া হয়েছে আমাদের জন্য। টিপসগুলো কি কি দেখে নিই। 

ফ্রীজ যখন খুলব, মাস্ক পরে খোলা উচিৎ। এতদিন জানতাম- ঘরে এলেই মাস্ক খুলে ফেলা উচিৎ। বেশিক্ষণ মাস্ক পরলে আমাদের ফুস্ফুসে সমস্যা হতে পারে। ফ্রিজে খাবার বা সব্জি না রাখাই ভাল-সেই কথাও বলা হয়েছে টিপস এ। আচ্ছা ফ্রিজে যদি সব্জি না রাখি, তাহলে তো প্রত্যেকদিন বাজার যেতে হবে নাকি ওই শুকিয়ে যাওয়া সব্জিই খাওয়া ভালো? কিন্তু আবার এটাও বলা হয়েছে যতটা কম বাজার যাওয়া যায় ততোটাই ভাল।আবার বলা হচ্ছে যে খুব ভিটামিন, প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে, কারন ইমিউনিটি বাড়ানো দরকার। তাহলে কি করবো বলুন তো?

মেসেজটা শেষ অবধি পড়তে পারলাম না কারন নিজেকে Demotivated লাগছিল। তারপর ভাবলাম -নিজেই নিজেকে Motivated করতে হবে। আমি তো নীচের লিখাটা পড়ে Motivated হলাম, আর আপনারা? 

আমরা এক রহস্যময় মানবপ্রজাতি। আমরা শুধুই কি গর্ভবতী হাতিকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলি, আমরা গর্ভবতী মহিলাকেও অত্যাচার করে ফুটপাথে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি। আবার সেই আমরাই পরিত্যক্ত সদ্যজাত শিশুকন্যাকে ডাস্টবিন থেকে তুলে লালনপালন করেছি। আমরা যেমন দুষ্ট রাবন ঠিক তেমনিই আমরা ভগবান রামচন্দ্রও। আমাদের মধ্যে যদি দুর্যোধন থাকে তো আমাদের মধ্যে অর্জুনও আছে ।'

আমরা মহান। অনেক কষ্ট করে টাকা জমিয়ে ঘর বানাই। নিজের বাড়ীর লোক বেশিদিন থাকলে অস্বস্তি হয় ঠিক ই, কিন্তু আরশোলা, টিকটিকি, মাকড়সাদের তো তাড়াই না। ওরা তো দিব্যি বাস করে আমাদের সাথে। শুধু তাই নয়, আমরা আমাদের ঘরে কুকুর,বেড়াল, খরগোশ নিয়েও থাকি। আমরা শিবলিঙ্গের ওপর দুধ ঢালি কিন্তু ফুটপাথের অভুক্ত শিশুগুলোকে দিই না। আমরা সত্যিই অদ্ভুত, আমরাই মহান আবার আমরাই শয়তান। 

সব প্রজাতির জন্ম হয়, বংশবৃদ্ধি হয়।সব কিছু সময়ের সাথে সাথে, আবহাওয়ার সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। তাহলে ভাইরাসও তার ব্যতিক্রম হতে পারে না। আমাদের শরীরের মধ্যে কতরকমের ব্যক্টেরিয়া,কৃমির বসবাস। তাহলে এই করোনা কেন জায়গা পাবে না?আমাদের এই বিশাল শরীরের মাঝে একটু জায়গা কি করোনা কে দেওয়া যায় না? জানি, আপনি বলবেন -আমি কি পাগলের মতো বলছি। আমাদের মহান ফুস্ফুস কি কাবু হয়ে যাবে এই ক্ষুদ্র ভাইরাস এর কাছে? আর আমরা তা মেনে নেব? চলুন, বরং মিলেমিশে থাকি। শরীরকে এমনভাবে মানসিক আর শারীরিক জোর দিয়ে গড়ে তুলি যাতে করে এই শরীরের ক্ষতি না করে করোনা সুন্দরভাবে থেকে একটা অ্যান্টিবডি তৈরী করে। আর হতেও তো পারে যে এই অ্যান্টিবডি আমাদের অন্য আরও অনেক রোগ যেমন ক্যান্সার রোগের প্রতিরোধ এ সাহায্য করবে? ভবিষ্যৎ কে জানে? জ্যোতির্বিদরাও ভবিষ্যৎ বলতে পারে না।ওরা শুধু পরিস্থিতি বিচার করে তার একটা পূর্বাভাস দিতে পারে যেমন আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর দিয়ে থাকে। 

তাই ঠিক করলাম- ফ্ল্যাট বানালাম আমরা; টাকা খরচ, পরিশ্রম করলাম আমরা; শশুরবাডির লোক কে ছাড়াই থাকা শুরু করলাম নতুন ফ্ল্যাট এ।ব্যাস একটা তো শুন্যস্থান তৈরী হলই। আর তা পুরন করতে চলে এল ঝুল, আরশোলা, পোকামাকড়, মাকড়সা, টিকটিকি, আরও কতো ভাইরাস, ব্যক্টেরিয়া। এতজনকে যখন জায়গা দিয়েছি, করোনা কেন বাদ যাবে? চলুন, এই নতুন অতিথিকে নিয়েই থাকা শুরু করি।প্রথম এসেছে বলে করোনা বুঝতে পারছে না যে তার কি করা উচিৎ আর উচিত নয়।এখন তো এটা ট্রাঞ্জিসেন পিরিয়ড চলছে। তাই করোনারও সমস্যা আর তাতে আমাদেরও সমস্যা। নতুন অতিথির একটু তো সময় লাগবেই খাপ খাওয়াতে। জানেন তো আমাদের প্রত্যেকের শরীরে ক্যান্সার এর কোষ আছে। সেই কোষ কারো কারো শরীরে বাড়তে শুরু করে, আর তখনই তৈরী হয় সমস্যা। হয়ত বহু যুগ আগে ক্যান্সারের ও এইভাবেই জন্ম হয়েছিল। এখন মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ঠিক তেমনভাবেই একদিন করোনা আমাদের সাথে আর আমরাও করোনার সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাবো।

যতদিন না অবধি করোনা খাপ খাচ্ছে আমাদের শরীরে, ততদিন আমাদের সাবধানে থাকতেই হবে। যেমন কিছু যোগ ব্যায়াম, প্রার্থনা, ঈশ্বরকে বিশ্বাস -এইগুলো নিয়মিত করতে থাকলে আমাদের মনের জোর বেড়ে যায়। আর তার সাথে বেশি করে জল খাওয়া, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।আর এইসবের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখা যাতে করে আমরা সময়ই না পাই উল্টোপাল্টা কিছু ভাবার। করোনা আমাদের ব্যস্ততা দেখে যেন শরীরের ভেতরে কম্পন আনুভব করে ভয়ে শান্ত হয়ে বসে থাকে, তারপর সময় হলে যেন বিদায় নেয়। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মাতৃভাষা

কালবৈশাখীর আগমনে

প্রকৃতিই আমার ঘর