প্রকৃতি

picture of nature and god এর ছবির ফলাফল

এই যে তুমি ,তোমরা কখনো ভগবান কে দেখেছো ? যাকে তোমরা কখনোই দেখো নি তাকে তোমরা কত ভালোবাসো ,তাঁর জন্য কত মন্দির তৈরী করেছো, কত পুজো দাও ,কত উপোস করো। সেই ভগবান কে নিয়ে তোমাদের কত আদিখ্যেতা।


একবার ভেবে দেখো তো যদি তোমরা তাকে দেখতে পেতে তাহলে কি একইরকম ভাবে ভালোবাসতে ? কিছু কিছু জিনিস অদৃশ্য থাকাই বোধ হয় ভালো ,এতে সেই অদৃশ্য জিনিসের মূল্য বেড়ে যায়। হঠাৎ করে কোনোদিন যদি সারা বিশ্বে দৈববাণী হয় যে বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে পুরি তে ভগবান আসছেন সব মানুষের সমস্যার সমাধান করতে ,যেটা সম্ভব নয় ,তবুও তর্কের খাতিরে যদি এমনটাই ধরে নিই ,কী হবে তোমাদের প্রতিক্রিয়া ? আমার তো মনে হয় বেশিরভাগ মানুষ দুদিন আগে থেকেই ওখানে হাজির হবে ,আর বাকিদের মধ্যে কিছুজন নিজেকেই ভগবান ভাবে বা ভগবানে বিশ্বাস করে না বলে যাবে না ,আরও কিছুজন সুখী বলে যাবে না। ভগবান কিন্তু কাউকে সারাজীবন অসুখী রেখেছে এমনটা নয়,তবে সুখ জিনিষটা আপেক্ষিক ব্যাপার, তবুও যারা ভগবানের কাছে বর্তমানের সমস্যার কথা জানাবে তারাই অতীতের সুখের কথা জানাবে না।  তাহলে সেই ভগবানের সেই বিশেষ দিনের কথা ভাবা যাক। শুধু অভিযোগ আর অভিযোগ শুনে যাবেন ভগবান। এতো চিৎকার চেঁচামিচি হবে কিন্তু কেউই বলবে না যে "তুমি যা দিয়েছো তা অনেক ,আমি যেন এইভাবেই চলতে পারি ,তোমার সৃষ্টি এই অসীম বিশ্বব্রম্ভান্ডের একটা অংশ হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি ,আর কোনোভাবেই যেন এই সুপ্রিম পাওয়ার কে কষ্ট না দিই"। আর সেইজন্যই ভগবান দেখা দেন না,আর তিনি ঠিক ই করেন।
   
সত্যি ই কি ভগবান আছেন ?একবার শুধু কল্পনা করো-সূর্য  আর তার চারিদিকে কত গ্রহ ঘুরে চলেছে অবিরত।সূর্য আর পৃথিবীর মাঝে শুধুই শূন্যতা। যদি ভগবান থেকেও থাকেন নিশ্চয় তিনি শুধু পৃথিবীতে নেই,শুধু পৃথিবীতে থাকলে তো চলবে না ,সেই ভগবান কে তো সূর্যের গতি,তাপমাত্রা এর দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।  তাহলে তিনি এই মহাশূন্যে আছেন যেখান থেকে তিনি পুরো সৌরজগৎ কে দেখতে পাবেন। কিন্তু এই সৌরজগতের মতো কোটি কোটি আরো সৌরজগৎ যদি থেকে থাকে ,আর ভগবান যদি এক আর  অদ্বিতীয়া হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয় তিনি কোটি কোটি সৌরজগতের মাঝে আছেন। আর এই মানুষ সামান্য একটা মন্দিরে বসে উপোস করে ভগবান কে যদি ডাকতে থাকেন,তাও আবার নিজের ভালোর জন্য ,কৃতজ্ঞতা স্বীকারের জন্য নয় -ডাকতে থাকেন ,তাহলে যে ভগবান এই কোটি কোটি সৌরজগতের দায়িত্ব নিয়ে অবিরত ধ্যান বা সাধনা করে চলেছেন ,তাঁর কাছে আমাদের এই তুচ্ছ প্রার্থনা শুধু নিজেকে ভালো রাখার প্রার্থনা কি পৌঁছায় ?নাকি আমাদের সব প্রার্থনাগুলো স্প্যাম বক্সে জমা হতে থাকে ?তাই পূজা ,উপোস এ সময় নষ্ট না করে আমাদের মন দেওয়া উচিত কর্মের দিকে। কিন্তু ভগবান কে বিশ্বাস না করলে মনে হয় মাথার ওপর কেউ নেই। মনে হবে এক বিশাল ছাদের টিলা ছাদের কোনায় তোমাকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেখান থেকে তুমি যে কোনো সময় মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যেতে পারো। তাই ভগবান কে বিশ্বাস তো অবশ্যই করতে হবে ,কিন্তু ভগবানের সংজ্ঞা টা বদলে নেওয়া দরকার। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক : এক বিশাল বড় কোম্পানী এর এক সামান্য নিচু লেভেল এর কর্মীর কথা ভাবা যাক। কোম্পানীর  মালিক কে এই কর্মী কখনো দেখে নি বা দেখার প্রয়োজন ও মনে করে নি। কিন্তু এই কর্মী যদি খুব বাজে কাজ করে থাকে ,তাহলে সেই খবর পুরো কোম্পানি তে ছড়িয়ে পড়বে ,খুব কম সময়ের মধ্যেই।আর শীঘ্রই সেই কর্মী কে বরখাস্ত করে দেওয়া হবে কোম্পানি থেকে ,কোম্পানির মালিকের অনুমতি ছাড়াই।কিন্তু যদি উল্টো টা ঘটে ,ধরে নেওয়া যাক ,সেই কর্মী খুব ভালো কাজ করছে ,এমন কি তার কর্মদক্ষতার জন্য কোম্পানির আয় কিছুটা হলেও বাড়ছে। এই ক্ষেত্রেও মালিক এর কাছে কিন্তু এই কর্মীর কথা পৌঁছবে না। মালিক শুধু জানবে প্রজেক্ট টা ভালো চলছে। কর্ম অনুযায়ী ফলাফল পাওয়ার জন্য কর্মীর ঠিক ওপরের লেভেল এর কর্মীরাই দায়ী থাকবে।ঠিক তেমনি আমাদের ভালো বা খারাপের জন্য আমাদের এই সৌরজগৎ ই দায়ী থাকবে। কোটি কোটি সৌরজগতের যিনি মালিক তিনি হলেন ভগবান। তাই আমাদের সৌরজগৎ কে স্বাস্থ্যবান রাখা উচিত। আর তার জন্যই পরিবেশের খেয়াল রাখা উচিত।

তাহলে ভগবান বলতে বোঝায়  অসীম শক্তি ,সেই শক্তি ,এই সৈর শক্তি ,মহাকাশ ,হাজারটা সৌরজগতের মিলিত শক্তি। আর আমরা সেই শক্তিরই একটা অংশ মাত্র।  মানুষ মরে গেলে মানুষের সেই শক্তি মিশে যায় সৈর শক্তির সাথে।  আবার দুটো কোষের মিলনে যে প্রচুর শক্তি বিকিরণ হয় সেই থেকেই জন্ম হয় একটা মানুষের। প্রতিটা প্রাণ একটা শক্তির রূপ মাত্র।যেমন যান্ত্রিক শক্তি,তড়িৎ শক্তি ,ঠিক তেমনি প্রাণশক্তি। বেশি শক্তি কম শক্তি কে নিজের দিকে টেনে নেয় আর তাইতো মানুষ সমুদ্রের বিশাল ঢেউ এ তলিয়ে যায়।আমার কাছে প্রকৃতি ই ভগবান।  আমার কাছে যা কিছু হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায় তাই ভগবান।

আজ পৃথিবীটাই বদলে যেত যদি আমরা সবাই আমাদের বাবা,মা, ভাই বোনকে ভগবান ভাবতাম।  বৃদ্ধাশ্রম এর খরচ টা বেঁচে যেত আর সেই টাকায় অনাথ আশ্রম বানানো যেত। আমরা যদি প্রকৃতির এই শক্তি কে ভালো কাজে লাগাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে প্রকৃতি ও আমাদের অনেক কাজের সমাধান করে দেবে।  আসলে আমরা প্রকৃতির শক্তি কে মোবাইল এর চিপস এ ,কম্পিউটার এর হার্ড ডিস্ক এ সীমাবদ্ধ করে রাখি। একটা জিনিস কিন্তু ধ্রুব সত্য যে টোটাল শক্তির পরিমান বদলায় না ,শুধু এক রূপ থেকে অন্য রূপে যায়। আমরা প্রকৃতির শক্তি কে মেশিনের মধ্যে রাখতে চাই,প্রকৃতির শক্তিকে মেশিনের মধ্যে রেখে ভালো কাজের সাথে খারাপ কাজ ও করা হয়  আর তাই তো প্রকৃতি খেপে যায়। তাই ঠিকঠাক করে কালবৈশাখী ঝড় টাও  হতে পারে না।  মানুষ যখন ক্যান্সার রোগের ওষুধ খোঁজার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে তবু ও বার বার বার্থ্য হচ্ছে , কে জানে হয়তো এই প্রকৃতির মধ্যেই একটা সামান্য জিনিসের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে সেই দুরারোগ্য ব্যাধির ওষুধ। আর সেইজন্যই প্রকৃতির খেয়াল রাখা উচিত।প্রকৃতি কে ভালোবাসা উচিৎ। ভালোবাসলেই মানুষ আর প্রকৃতির মিলিত শক্তিতে  আমরা নতুন ভালো কিছু তৈরী করতে পারবো। আমরা যেন দিনে দিনে প্রকৃতির কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আমাদের ছোটবেলায় প্রকৃতিকে দেখেই আমরা সময় কাল বলে দিতাম।  কিন্তু এখন বর্ষাকালেও কোকিল ডাকে, গ্রীষ্মের একটু বৃষ্টিতেই ব্যাঙ ডাকে।রাত্রি বেলাতেও মোরগ ডাকে। তবে কাশফুল এখনো শরত কালেই ফুটছে। মানুষের বেপরোয়া কাজকর্ম, উছ্রিংখল জীবনযাপনে পাখিদের জীবনযাপন বিগড়েছে।  কিন্তু এইভাবে চলতে থাকলে একদিন উদ্ভিদদেরও জীবনযাপন ব্যাহত হবে। আর তখন শরতকালে কোথাও কাশফুল পাওয়া যাবে না।শরতকাল বা বর্ষাকাল আলাদা করা যাবে না  কিংবা খুব ই কম সময়ের মধ্যে তারা বদলাতে থাকবে। 

সেইজন্যই এখন থেকেই আমাদের সাবধান হওয়া উচিত। শক্তির অপচয় না করে সঞ্চয় করা উচিত। বেশি করে গাছ লাগানো উচিত। তার ও আগে যেটা করা উচিত সেটা হলো এই অসীম শক্তির কাছে আমাদের মাথা নতো  করা উচিত।  আমাদের অহংকার কে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাধিস্থ করা উচিত। বৃদ্ধাশ্রম না বানিয়ে অনাথ আশ্রম বানানো উচিত। ক্ষতিকারক সার প্রয়োগ না করে মাটিকে প্রাকৃতিকভাবে মজবুত করা উচিত। আর তার ও আগে আমাদের অল্পতেই খুশি হওয়া উচিত। আমাদের চাহিদা কমানো উচিত। তার মানে কিন্তু এই নয় যে আমরা নতুন প্রযুক্তিবিদ্যার প্রয়োগ করবো না ,নতুন প্রযুক্তিবিদ্যার আবিষ্কার আর সঠিক ব্যবহার -দুটোর ওপরেই সমান জোর দেওয়া উচিত। গঙ্গার জল কে কাজে লাগিয়ে যেমন অনেক কিছু করতে হবে ঠিক তেমনি গঙ্গার জল যাতে দূষিত না হয় সেই বিষয়ে খেয়াল রাখাও উচিত। প্রকৃতি কে দূষিত না করে যদি আমরা কোনো নতুন প্রযুক্তিবিদ্যার আবিষ্কার আর সঠিক ব্যবহার করতে পারি,তাহলে আমরা সবচেয়ে ভালো ফলাফল টা পেতে পারি। 



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মাতৃভাষা

কালবৈশাখীর আগমনে

মাতৃত্ববোধ