নারী -পুরুষ
বদলে গেছে যুগ । একটা সময় ছিল যখন ঘরে ঘরে মেয়েরা মেয়েদের মতোই থাকতো ।আর ছেলেরা তাদের শাসিয়ে রাখতো।স্ত্রী মানেই ছিল বাচ্ছার জন্ম দেবে আর রান্না বান্না ,ঘর সামলাবে।পুত্র সন্তানের জন্ম দিলে খুব ই ভালো নয়তো এমন ও হতো যে ওই লোকটি দ্বিতীয়বার বিয়ে করতো শুধুমাত্র পুত্রসন্তানের জন্য।আর দ্বিতীয়বার বিয়ে করার জন্য ওই লোকটির মা ই ইন্ধন দিত। প্রতিটি শাশুড়ি কষ্টের স্বীকার হতো আর সেই কষ্ট একটু হলেও কম হতো যখন সেই শাশুড়ি তার বউমার ওপর ওই একরকম অত্যাচার করতে পারতো।
এই যুগে বদলেছে মেয়েরা।ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো জ্বলেছে। আজ বোধ হয় একটি মেয়েও শিক্ষার আলো থেকে বন্চিত হয় না,বোধ হয় কোনো মেয়ে কে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয় না,কন্যা সন্তানের জন্ম দিলে তাকে বয়কট করাও হয় না বা সেই সন্তানের পিতা দুবার বিয়ে করে না।মেয়েরা ছেলেদের মতো সিগারেট খেতে শিখেছে ,রাত্রে পার্টি করতে শিখেছে,বয়ফ্রেইন্ড এর সাথে শর্ট ড্রেস এ ডিস্কো তে যেতে শিখেছে। এইগুলোই কি উন্নতির পরিচয় ?
মেয়েরা বোধ হয় মেয়েদের কে ছোট চোখে দেখে তাইতো আজকাল কার মেয়েরা ছেলেদের ভালো গুন গুলো নিতে গিয়ে খারাপ গুন গুলোকেও নিতে শিখেছে। প্রতিটা মেয়ে আজকাল তুলনা করে বলতে থাকে - একটা ছেলে যদি করতে পারে,তাহলে একটা মেয়ে কেন করতে পারে না ? আর এই তুলনাটাই সবচে বড় প্রমান যে মেয়েরা নিজেদের সব কিছু কে নিচু চোখে দেখে ।কিন্তু প্রতিটা মেয়ের এটাই ভাবা উচিত যে কিছু কিছু জিনিস যেগুলো মেয়েদের নিজস্ব ঠিক তেমনি কিছু কিছু জিনিস ছেলেদের ও নিজস্ব।কই - কোনো ছেলে কি বলে যে -" মা ,একটা মেয়ে যদি করতে পারে তাহলে একটা ছেলে কেন পারবে না ?"।ছেলেরা যেমন চাকুরী করে টাকা কামাই করে,বাবা মা এর দায়িত্ব নেই,- এটা ওদের ভালো দিক।মেয়েরা সেই ভালো জিনিসটা এখনো অনেকটাই নিতে পারে নি।তারা চাকুরিজীবি হয়েছে ঠিক ই কিন্তু নিজের বাবা মা এর দায়িত্ব নিতে পারে নি ।কারো সাথে তুলনা করলে আমার মনে হয় ভালো দিকগুলোরই তুলনা করা উচিত।
কিন্তু আজকালকার মেয়েরা যেসব তুলনা করে :
একটা ছেলে যদি জিন্স,টপ পরতে পারে,একটা মেয়ে কেন পারে না ? একটা ছেলে যদি রাত 11টা অবধি বাড়ির বাইরে থাকতে পারে,পার্টি যেতে পারে,বারে যেতে পারে একটা মেয়ে কেন পারে না ? একটা ছেলে যদি smoke করতে পারে,drink করতে পারে একটা মেয়ে কেন পারে না ? তুলনা করা ভালো,তুলনা করে ভালো দিকগুলো apply করাও ভালো কিন্তু খারাপ দিকগুলো কি নেওয়া ভালো ?? মেয়েরা অন্ধের মতো ছেলেদের সব কিছু অনুসরণ করতে যায়।একটা ছেলে যদি ছোট চুল রাখে,একটা মেয়ে কেন পারে না ?? একটা ছেলে যদি কানের দুল না পরে,একটা মেয়েকে কেন পরতে হবে ??এইসব কিছুই তুচ্ছ জিনিস। কিন্তু কোনো মেয়ে এটা কেন বোঝে না যে নারী হচ্ছে প্রকৃতি,তার একটা নিজস্বতা আছে।কিন্তু মেয়েরা কেন তাদের নিজস্বতা কে বিসর্জন দিচ্ছে ? এতেই তো বার বার প্রমান হয় যে মেয়েরা ছেলেদের থেকে অনেক নিচে। কেউ যদি ওই পোশাকে আরাম অনুভব করে তাহলে ঠিক ই আছে ,কেননা এটাও ঠিক যে শাড়ী পরে যুদ্ধ করার চেয়ে জিন্স পরে যুদ্ধ করলে বেশি ভালো যুদ্ধ করা যায় কিন্তু কেও যদি অশ্লীল পোশাক পরে তাহলে সেটা কখনোই বাঞ্ছনীয় নয়। সবচে বড় কথা এটাই যে এইসব তুলনা খুব ছোট্ট মাপের।
উল্টে মেয়েরা যদি এইভাবে তুলনা করতো :
একটা ছেলে যদি এভারেস্ট এ উঠতে পারে ,একটা মেয়ে কেন পারবে না ?একটা ছেলে যদি তার বাবা মা এর দেখাশুনো ,চাকরি একসাথে সামলাতে পারে ,একটা মেয়ে কেন পারবে না ?একটা ছেলে যদি বাবার অসুখ হলে বাবা কে মাঝ রাত্রে হাসপাতাল এ নিয়ে যেতে পারে ,একটা মেয়ে কেন পারবে না ?
একটা ছেলে যদি রান্না,বাজার,ব্যাঙ্কিং এর ডকুমেন্টস আর সেভিংস সব একসাথে ম্যানেজ করতে পারে ,একটা মেয়ে কেন পারবে না ?
এখনো পৃথিবীতে অনেক ভালো পুরুষ মানুষ আছে যারা রাত্রে বেলা ইমার্জেন্সি ছাড়া বাইরে থাকে না ,বরং তাড়াতাড়ি অফিসের কাজ সেরে বাড়ি যায় ,বাড়িতে গিয়ে নিজের স্ত্রী কে সাহায্য করে, বাচ্ছাদের পড়াশুনোতে সাহায্য করে ,যারা সিগারেট বা মদ কোনোটাতেই নেশা করে না। যারা কখনো হাফ স্লীভ ড্রেস আর বারমুডা পরে বাহিরে যায় না। কিন্তু আজকালকার মেয়েরা তাদের কখনোই অনুসরণ করে না ,সমস্যাটা এখানেই। যেমন একটা বেগুন গাছে ১০ টা বেগুনের মধ্যে ২ টো বেগুনে পোকা ধরতেই পারে,ঠিক তেমনি এক কোটি পুরুষের মধ্যে ২০,০০০ টা বাজে ,নোংরা পুরুষ থাকতেই পারে। রাস্তায় ১০টা হাতির মধ্যে ২ টো পাগলা হাতি থাকতেই পারে। যে রাস্তায় পাগলা হাতি হাঁটে ,আমরা ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে কেও কি সেই রাস্তায় হাঁটি ?কিন্তু কি করে বুঝবো যে ঐটাই পাগলা হাতি ?যেহেতু বুঝতে পারি না ,তাই চেষ্টা করি খুব দরকার ছাড়া বাঁধন ছাড়া বন্য হাতির পাশে এক রাস্তায় না হাঁটার।
ঠিক একই রকমভাবে আমরা মেয়েরা কি একটু সাবধানে থাকতে পারি না ?যখন বার বার অত্যাচারের ঘটনাগুলো খবরের পাতায় হাইলাইট হয়ে আসছে।সেই দুষ্চরিত্রদের ফাঁসি হচ্ছে,জেল হচ্ছে কিন্তু তারপর ও ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।যখন এই পশুর চেয়েও অধম পুরুষগুলোকে ৮০% সভ্য পুরুষ মিলেও সোজা করতে পারছে না ,তখন কি মনে হয় না আমাদের মেয়েদের নিজেদের বদলানো দরকার ?প্রয়োজনে প্রতিটা স্কুল এ শেখানো হোক আত্মরক্ষার উপায় ,শেখানো হোক ক্যারাটে,অনুমতি দেওয়া হোক রাত্রে মেয়েদের বাইরে বেরোতে হলে তারা যেন তাদের সাথে লুকিয়ে নিয়ে যেতে পারে ছুরি বা তলোয়ার। কিন্তু না , বিধাতার কি নিষ্ঠূর পরিহাস ?নারীশক্তি এখনো জেগে ওঠে নি আর তাইতো মেয়েরা শুধু বাজে ছেলেদের অনুকরণ করে.এইভাবে চলতে থাকলে আরও কয়েকটা বছর পর ,মেয়েরা বলতেও পারে : একটা ছেলে যদি অনেক রাত্রে বাড়ি গিয়ে নিজের বউ কে মারধর করতে পারে ,একটা মেয়ে কেন অনেক রাত্রে বাড়ি গিয়ে নিজের স্বামীকে মারতে পারে না ? একটা ছেলে যদি শুধু বারমুডা পড়ে পাড়ায় ঘুরে বেড়াতে পারে ,একটা মেয়ে কেন পারে না ? কি আশ্চর্যের বিষয় - এই দুটো হয়তো মেয়েরা কোনোদিন ই পারবে না। তাই এটাই কি ভালো নয় যে আদর্শবান পুরুষদের অনুসরণ করা আর বাজে পুরুষদের অনুকরণ না করা।এটাই কি বাঞ্ছনীয় নয় ?কিন্তু তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যাক :
যদি এমন হতো,মেয়েরা খুব highly educated,প্রতিটা কোম্পানি এর top পোস্ট এ মেয়েরা,মেয়েরা একাধারে কোম্পানি সামলাচ্ছে,পরিবার,বাচ্ছা, সাথে বাবা মা এর দিখভাল।কিন্তু কোনো মেয়ে বার বা পার্টি তে রাত 8 টার পরে অযথা সময় নষ্ট করছে না,কোনো মেয়ে smoke বা drink করছে না,কোনো মেয়ে কে রাত্রিবেলা বাড়ীর বাইরে বিনা কারণে দেখা যাচ্ছে না,প্রতিটা মেয়ে কর্মরত, রাত্রে তাদের বাইরে থাকার সময়ও নেই,প্রতিটা মেয়ের মাথায় এক পিঠ চুল,পরনে শাড়ি-লাল পাড় দেওয়া সাদা শাড়ি কিংবা ফুল স্লীভ চুড়িদার,বা জিন্স আর ফর্মাল টপ বা কুর্তি।পরনের মধ্যেই থাকবে তলোয়ার ঠিক যেন মা দুর্গা । আর প্রয়োজনে পরনের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে তলোয়ার,আর তখন মা দুর্গা হয়ে উঠবে মা কালি।আমার দৃঢ় বিশ্বাস এমনটা হলে একটা সময় আসবে যখন ছেলেরা মেয়েদের মতো হতে চাইবে।এমনটা হলে মেয়েদের ওপর অত্যাচারও কমে যাবে।
নারী ঠিক প্রকৃতির মতোই স্নিগ্ধ ,মধুর। ঠিক যেমন গ্রীষ্মের প্রচুর তাপে মাটি পুড়ে গেলে ,প্রকৃতি শুরু করে মুষলধারে বৃষ্টি আর ধংস করে দেয় সূর্যের সেই তাপ কে, ঠিক তেমনি যখন কোনো পুরুষ নিজের তেজে ঝলসে দেয় সেই নারী কে তখন সেই নারী হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন