করোনার জন্মবৃত্তান্ত

এক জঙ্গলে এক মহান বাঘ বাস করতো। এই বাঘ টি সকলের থেকে আলাদা ছিল। মহাদেব এর পরম ভক্ত এই বাঘ টি। একদিন এই বাঘ টি মহাদেব কে একটি প্রশ্ন করলেন -"আচ্ছা দেব ,আপনি ই তো বলেন যে আপনি সকলকে ভালোবাসেন।  যদি আপনি সকলকে সমান ভালোবাসেন তাহলে সবার জন্য এক ই রকম নিয়ম নয় কেন ?" 
মহাদেব উত্তরে বললেন -"তোমার তো চারটে  সন্তান আছে। আর তুমিও তাদের সকলকেই সমান ভালোবাসো ,তাহলে বড় সন্তান কে সবচে বড় দায়িত্ব দাও, আর ছোট কে তোমার কাছে আরাম করতে শেখাও কেন ?তুমিও তো নিয়ম সবার জন্য আলাদা ই করেছো, তাই না ?নাকি তুমি ছোট কে বেশি ভালোবাসো?" 
বাঘটি বললো -"না দেব ,আমি মা হয়ে কি করে এই অন্যায়টা করতে পারি ?" 
মহাদেব বললেন -" আমিও তো সকলের পিতা হয়ে কি করে ভালোবাসায় ভেদাভেদ করতে পারি ? কিন্তু হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন তোমার মনে ?" 
বাঘটি উত্তরে বললো -"আপনার বিশাল পৃথিবীতে আমাদের বসবাসের জায়গা সীমিত কিন্তু মানুষদের বসবাসের কোনো গন্ডি আপনি তৈরী ই করেন নি। জলে,স্থলে, আসমানে,জঙ্গলে ,পুকুর-নদী -সমুদ্রের আশেপাশে ,পাহাড়ে -পর্বতে ,সমতলে-মালভূমিতে -সর্বত্রই তাদের অবাধ রাজত্ব। এই ভেদাভেদ কেন দেব ?"
মহাদেব বললেন -"যেমন তুমি বড় সন্তানকে গুরু দায়িত্ব দিয়েছো ,ঠিক তেমনি আমিও মানুষদের ওপর গুরু দায়িত্ব দিয়েছি। আর তুমি তো জানোই -যাকে গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে বেঁধে রাখলে সে দায়িত্ব পালন করবে কি করে ?"
বাঘটি বললো -" কিন্তু দেব ,আমার বড় সন্তান কোনো ভুল করলে বা ঠিকঠাক কাজ না করলে আমি তাকে বন্দি করে রাখি আর প্রচুর শাসন করি। " 
মহাদেব হেসে বললেন -"সে তো আমি খুব ভালোভাবেই জানি।  আর সেইসময় তুমি তোমার বড় সন্তানের দায়িত্ত্বগুলো দ্বিতীয় সন্তানের কাঁধে চাপিয়ে দিতেও পারো না। কারণ তুমি জানো যে বড় যে দায়িত্বগুলো নিষ্ঠার সাথে পালন করে সেগুলো আর কেও করতে পারবে না। "
বাঘটি বললো -"হা, ঠিক তাই ,পারে না তো। আবার এটাও ঠিক ওরা যে কাজগুলো পারে সেই কাজগুলো বড় করতে চায়ই না। "
মহাদেব বললেন -"তাহলে  তুমি তোমার অভিযোগের উত্তর পেয়ে গেছো ,নিশ্চয়। "
বাঘটি বললো -"না দেব। এখনো একটা প্রশ্ন থেকেই গেছে। আমি যেমন আমার সন্তানেরা কোনো অন্যায় করলে তাকে গৃহবন্দী করে শাসন করি ,কি আপনি তো তা করেন না ?"
মহাদেব বললেন -"আমি সময়চক্রে বাঁধা আছি। ছোট ছোট অন্যায়গুলো মিলে যখন একটা বড় অন্যায় তৈরী হবে ,তখন সময়চক্র তাদেরও গৃহবন্দী করে শাসন করবে ঠিক তুমি যেমন করো। কিছুটা সময়ের অপেক্ষা করো। "
মহাদেব এইসব বলে মিলিয়ে গেলেন অসীম শূন্যে। 

কয়েক বছর পর বাঘের তপস্যায় খুশি হয়ে মহাদেব আবার আবির্ভুত হলেন আর বললেন -"কি চাও তুমি ?আমায় ডেকেছো কেন ?"বাঘটি বললো -"আপনি সব ই জানেন দেব -আমার ছোট সন্তান ঘুরতে ঘুরতে দূরে একটা নদীর তীরে পৌঁছে গিয়েছিলো। আর এক শিকারী তাকে শেষ করে ফেললো। আচ্ছা দেব -আমাদের কে হত্যা না করেও তো ওরা বেঁচে থাকতে পারে ,কিন্তু তাও এই মনুষ্যজাতি কেন আমাদের জঙ্গলের বেশিরভাগ প্রাণী কে কাঁদায় ? আপনি কি ওদের শাস্তি দেবেন না ?"
মহাদেব বললেন -"তোমার তপস্যায় আমি খুশি হয়েছি ,তুমি কি চাও বলো ?" বাঘটি বললো -" আমি চায় আমার জঙ্গল এর প্রতিটি গাছ যেন সুরক্ষিত থাকে ,নদীর জল যেন পবিত্র থাকে ,প্রকৃতির গায়ে যেন এতটুকু আঁচড় না লাগে। প্রতিটি মাতার কোল যেন সুরক্ষিত থাকে। "মহাদেব বললেন -"এই বর দেওয়া কি করে সম্ভব ?সৃষ্টির নিয়ম ই তো তাই। তুমিও তো ছোট্ট হরিণ শিশুগুলোকে দিয়ে খিদে মেটাও। " বাঘটি বললো -"কিন্তু দেব আপনি তো জানেন ওরা আমার খাদ্য। আমি যদি ওদের না খাই ,আমি বা আমরা বাঁচবো কি করে ? মনুষ্যজাতি তো প্রাণে মারা যাবে না যদি আমাদের কে শিকার না করে। মনুষ্যজাতির এলাকায় যেসব পশুপাখি থাকে তাদের হত্যা করে তো তারা খিদে মেটায়। আবার আমাদের ওপর হামলা কেন ? এতো ডাকাতি।  আমাদের ঘরে ঢুকে আমাদেরকেই নাশ করার প্রয়াস ?আর তাছাড়া জঙ্গল তো আমাদের জায়গা। সৃষ্টির শুরুতে আপনি তো তাই ঠিক করেছিলেন। মনুষ্যজাতি তো নিজের বসবাসের জায়গা বাড়িয়েই চলেছে। আমরা তো ওদের জায়গায় গেলে তবেই তো ওরা আমাদের মারবে। আমরা তো ওদের জায়গায় যায় না। ওরা আমাদের এলাকায় প্রবেশ করে গাছ কেটে দেয় ,কৃত্রিম দাবানল তৈরী করে ,কত প্রাণীর হত্যা করে।  এইভাবে চলতে থাকলে তো আমাদের বসবাসের জায়গা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। 
দয়া করুন দেব ,এমন কিছু করুন যাতে এই মনুষ্যজাতি নিজেদের সীমার মধ্যে থাকে ,এমন কিছু করুন যাতে আমরা শান্তিতে একটু নদীতে জল খেতে পারি। এমন কিছু করুন যাতে আমাদের এই ছোট্ট জঙ্গলগুলো নিজেদের পরিধি বাড়াতে পারে। এমন কিছু করুন যাতে পশুপাখিদের এই মনুষ্যজাতির ওপর যে তীব্র ভয় তা কমে যায় ,আমরা যেন শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারি। "
মহাদেব বললেন-" তথাস্তু। "

মহাদেব এর এই একটা শব্দ ই কাঁপিয়ে দিলো চীনের উহান শহর কে। মহাদেব অনেক ভেবে দেখলেন  -"চীনের উদ্দেশ্য খুব ই অসৎ ,এমন অসৎ উদ্দেশ্যের নাশ হওয়া উচিত। আর এটাই সবচে ভালো সময় ওই বাঘ টিকে দেওয়া কথাটির মান রাখাও হবে আবার চীন এর অসৎ উদ্দেশ্য বিফল ও হবে আবার অসৎ উদ্দেশ্যকারী চীন শাস্তিও পাবে। " মহাদেব এর মনে হল -এক ঢিলে তিন পাখি মারার মতোই প্ল্যান -চীনের উহানের ল্যাব এ পাঠিয়ে দিলেন ইন্দ্রদেবকে। ইন্দ্রদেব ল্যাব এর সেট-আপ এমনভাবে বদলে দিলেন যে মেশিন বিস্ফোরিত হয়ে কেমিক্যাল বেরিয়ে তৈরী করলো এক পরিবেশ - যে পরিবেশ এ বাতাসে টিকে থাকা ভাইরাস গুলো নিজেদের অভিযোজিত করে হয়ে উঠলো ভয়ঙ্কর।

বাঘটি আবার মহাদেবের তপস্যায় বসলেন। মহাদেব আবির্ভুত হয়ে বললেন -"আবার কি হলো ?"
বাঘটি বললো -"কি হয়েছে বলুন তো দেব ,আজ চারিদিক কত নিস্তব্ধ। আর কোনো শিকারী ই আসে না। আমাদের সন্তানদের এতো আনন্দ আমি আগে কখনো দেখি নি। জঙ্গলের সীমানারেখায় বেড়ে ওঠা গাছগুলো খুব দ্রুত বেড়েই চলেছে ,এর ফলে জঙ্গলের পরিধিও বেড়ে চলেছে। বাতাস আজ কত পবিত্র লাগে। আজ নির্দ্বিধায় আমাদের সন্তানেরা নদীর ধারে জল খেতে যায়। জঙ্গলের বাহিরে ও কোনো মানুষ দেখা যায় না। কিন্তু হঠাৎ করে কি হল -এই কৌতূহলে জঙ্গল  ছাড়িয়ে অনেকটা দূরে চলে গিয়েছিলাম -দেখলাম ময়ূরগুলো রাস্তায়। আরো কিছুটা দূরে গেলাম -দেখলাম কিছু হরিণ ও রাস্তায়। তারপর ভাবলাম -এই জায়গা গুলো তো মানুষের ,এতো ঘরবাড়ি। কিন্তু মানুষগুলো কোথায় ?একটুক্ষণ গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে থেকে দেখতে লাগলাম। তারপর দেখলাম -মানুষগুলো জানালা দিয়ে দেখছে। সেই দিনটা আমি ওই গাছের আড়ালেই ছিলাম -দেখলাম এক-দুজন করে বেরোচ্ছে ,প্রচুর খাবার কিনে ঘরে ঢুকে আবার দরজা বন্ধ করে ঘরেই বন্দি থাকছে। দেখলাম চারিপাশে কত পাখি। কোকিলের ডাক শুনলাম। ময়ূরের নাচ দেখলাম ,হরিনের আনন্দ দেখলাম। এতো কিছু হয়ে যাচ্ছে রাস্তাতে ,তাও মানুষদের আড্ডা দেখলাম না ,মানুষদের কোলাহল শুনতে পেলাম না। সন্ধ্যে নেমে এলো ,তবুও রাস্তায় ওদের সমারোহ নেই। সন্ধ্যেবেলায় আকাশে তাঁরার সৌন্দর্য দেখলাম। মনুষ্যজাতিকে দেখলাম চাঁদের আলোয় ছাদের ওপরে ,শুধু নিজের জায়গায় আটকে থাকার কষ্ট গ্লানিও তাদের চোখে ছিল স্পষ্ট। 
কিন্তু দেব এইসব আপনি কি করে করলেন ?"
মহাদেব বললেন -"তোমাকে বলেছিলাম -সময়ের অপেক্ষা করতে। সময় সব কিছুর উত্তর দেয়। আজ তোমরা নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়াচ্ছ আর ওরা বন্দি। এমনটাই তো তুমি চেয়েছিলে। "
বাঘটি বললো -"কিন্তু দেব , ওরা এইভাবে আর কতদিন বন্দি থাকবে ?"
মহাদেব বললেন -"যখন ওদের ভালো সময় আসবে ,তখন ওরা আবার আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যাবে। যদি এবার তোমরা বাড়াবাড়তি শুরু করো ,তাহলে তোমাদের আবার দুর্দিন আসবে। আর যদি মনুষ্যজাতি এই ঘটনা থেকে কিছু শিক্ষালাভ করে সেই শিক্ষার মর্যাদা লঙ্ঘন করে ,তাহলে এই ঘটনার আবার পুনরাবৃত্তি হবে। " এই বলে মহাদেব অন্তর্হিত হলেন। 
বাঘটি তার জঙ্গলে একটা সভার এর আয়োজন করলো। সেই সভাতে জঙ্গলের সকল সদস্য উপস্থিত হলো। বাঘটি বললো - "আমরা সবাই মিলে এই সুদিন কে ধরে রাখার চেষ্টা করবো। আমরা সবাই বাইরে বেরোলেও মানুষের এলাকার মধ্যে যাবো না। আমরা আমাদের জঙ্গলের পরিধি বাড়াবো। কিন্তু এতটাও বাড়াবো না যার ফলে মনুষ্যজাতি কে সংকটে পড়তে হয়। আমরা যদি কিছু অনাচার করি ,আবার আমাদের সেই পুরানো দুর্দিন ফিরে আসবে। কেও যদি আজকের পর এই নিয়মের অন্যথা করে,তাকে শাস্তিও পেতে হবে। "
সভার সব সদস্যরা এক কথায় রাজি হয়ে গেলো। 
এখন ওরা সুন্দর দিন কাটাচ্ছে। 
আর এই বাঘ যাকে প্রকৃতির প্রতিনিধি হিসেবে মেনে নিলে বলা যায় যে করোনার বীজ তো প্রকৃতি স্বয়ং বপন করেছে আর এই কাজে প্রকৃতি চীন কে মাধ্যম করেছে মাত্র। প্রকৃতি নিজেই নিজেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য চীনের উহান শহরের ল্যাবরেটরি কে কাজে লাগিয়েছে।  

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ঘটনাটি পুরোপুরি অনুমানভিত্তিক। 

করোনার জন্মবৃত্তান্ত- বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে একটি কল্পনাভিত্তিক গল্প










মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মাতৃভাষা

কালবৈশাখীর আগমনে

প্রকৃতিই আমার ঘর